কোম্পানি কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা বিশিষ্ট ব্যবসায় সংগঠন। এই বৃহত্তম ব্যবসায় সংগঠনটি অন্যান্য সংগঠন থেকে বেশি সুযোগ সুবিধা ভোগ করে । বর্তমান ব্যবসায় ও শিক্ষাকর্মের ব্যাপক প্রসারের মূলে রয়েছে যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের অনন্য অবদান । নি েএসমস্ত সুবিধাসমূহ বর্ণনা করা হলো—
১. পর্যাপ্ত মূলধন সংগ্রহ (Enormous capital): কোম্পানির প্রতিটি শেয়ারের মূল্য হয় কম। কম মূল্যে অধিক সংখ্যক শেয়ার বিক্রি করে মূলধন সংগ্রহ করা সহজ হয়। এতে অল্প সঞ্চয়কারীদের নিকট থেকে মূলধন সংগ্রহ করা সুবিধাজনক এবং কোম্পানির মূলধনের পরিমাণও অধিক হয় ।
২. বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান (Establishment of large scale business) : বৃহদায়তন ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনায় কোম্পানি সবচেয়ে উপযোগী সংগঠন। বিপুল পরিমাণ শেয়ার ও ঋণপত্র বিক্রয় এবং দক্ষ ব্যবস্থাপক নিয়োগ করে সহজেই কোম্পানি এ ধরনের ব্যবসায় গঠন ও পরিচালনা করতে পারে ।
৩. উত্তম বিনিয়োগ ক্ষেত্র (Proper Investment Field): কোম্পানি সংগঠন সারা বিশ্বেই উত্তম বিনিয়োগ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। শেয়ারের মূল্যমান কম হওয়ায় সকল ধরনের মানুষ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এর শেয়ার কিনে বিনিয়োগ করতে পারে। লভ্যাংশ ছাড়াও শেয়ারের মূল্যমান বৃদ্ধি, রাইট শেয়ার প্রাপ্তি ইত্যাদি সুবিধা থাকায় তা সবার নিকট আরও অধিক আকর্ষনীয় ।
৪. ঝুঁকি বণ্টনের সুযোগ সৃষ্টি (Creating Facilities of Risk Distribution): একক মালিকানা বা অংশীদারিরভিত্তিতে কখনোই বড় ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ খাতে অর্থ বিনিয়োগ সম্ভব হয় না। অথচ কোম্পানি সংগঠনে ঝুঁকি বণ্টনের সুযোগ থাকায় এতে অর্থ বিনিয়োগের সহজ সুযোগ সৃষ্টি হয়। কোম্পানি যত বড় হয় বিক্রিত শেয়ারের সংখ্যাও ততই বৃদ্ধি পায়। ঝুঁকিও ততো বেশি বণ্টনের সুযোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে ।
৫. দক্ষ পরিচালনা (Efficient management): এ ধরনের কোম্পানি পরিচালনার ভার পরিচালকমণ্ডলীর উপর ন্যস্ত থাকে। পরিচালকমণ্ডলী গঠিত হয় দক্ষ পরিচালকগণ দ্বারা। অবশ্য পরিচালকমণ্ডলী পরিবর্তনযোগ্য। অর্থাৎ প্রয়োজনে পুরাতন পরিচালকমণ্ডলীকে পরিবর্তন করে দক্ষ পরিচালক নিযুক্ত করা যায় ।
৬. গণতান্ত্রিক পরিচালনা (Democratic management): এ ধরনের কোম্পানি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কোম্পানির সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত প্রতিনিধি দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। অর্থাৎ সংখ্যাগরিষ্ঠের দ্বারা পরিচালিত হয় বলে এর ব্যবস্থাপনা গণতান্ত্রিক ।
৭. জনগণের আস্থা (Public confidence): কোম্পানির গঠন, পরিচালনা, ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ আইন দ্বারা নির্ধারণ হয় বলে এতে আইনের বাধ্যবাধকতাও বেশি থাকে। ফলে ব্যবসায়ের উপর জনসাধারণের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং বিনিয়োগকারীগণ নির্ভয়ে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে।
৮. আন্তর্জাতিক সুনাম (International goodwill) : বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি শুধু যে দেশের মধ্যে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করে তা নয়, বরং দেশের বাহিরেও এদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। অর্থাৎ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের ব্যবসায়িক কার্যকলাপ ছড়িয়ে পড়ে। এক কথায় বলা যায় বৈদেশিক ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে যৌথমূলধনী কোম্পানিই হলো একমাত্র উপযুক্ত ব্যবসায় সংগঠন।
৯. গবেষণা (Research): নতুন উৎপাদনের কৌশল আবিস্কার, উৎপাদন-ব্যয় হ্রাস ইত্যাদির উদ্দেশ্যে কোম্পানি গবেষণা কার্যে অর্থ ব্যয় করতে পারে যা একমালিকানা বা অংশীদারি ব্যবসায় সম্ভব নয়।
১০. করের সুবিধা (Tax relief): অন্যান্য ব্যবসায় সংগঠনের করের হার অপেক্ষা কোম্পানির করের হার কম। অপরদিকে নতুন কোম্পানিগুলো কিছুদিন পর্যন্ত কর প্রদান থেকে রেহাই পায়।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত সুবিধাদি ছাড়াও এ ব্যবসায় হতে সমাজ, সরকার তথা দেশের সকল জনগণই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হয়ে থাকে। এ কারণে বর্তমানে এরূপ ব্যবসায় গঠনে ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায় ।